কানাডা পারমানেন্ট রেসিডেন্স-এর জন্য আবেদন করবেন কীভাবে?জেনে নিন খুঁটিনাটি

0
791

কানাডায় প্রতিবছর বহু ভারতীয় নিজেদের ভাগ্য অন্বেষণের উদ্দেশ্যে পাড়ি দেয়।কেউ বা যায় উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে আবার কেউ বা যায় কাজের উদ্দেশ্যে।প্রসঙ্গত উল্লেখ্য আমরা আগের একটি পোস্টেই ভারতীয় চাকরিপার্থীদের কানাডায় চাকরি সম্বন্ধে বিস্তারিত তথ্য আমাদের পাঠককে জানিয়েছি।তাই আজ কানাডায় বসবাসের জন্য কীভাবে কানাডা পার্মানেন্ট রেসিডেন্স-এর জন্য আবেদন করা যায় সেই বিষয়েই আলোচনা করবো।

কানাডার ইমিগ্রেশনের মূলত ছয়টি ক্যাটাগরি রয়েছে।  

  • ফেডেরাল স্কিলড ওয়ার্কার
  • প্রভিনসিয়াল নমিনি প্রোগ্রাম
  • কিউবেক স্কিলড ওয়ার্কার
  • বিজনেস ইমিগ্রেশন স্টার্ট আপ ভিসা প্রোগ্রাম-এর সাথে
  • কানাডিয়ান এক্সপেরিয়েন্স ক্লাস
  • ফ্যামিলি ক্লাস স্পনসরশিপ

এই প্রত্যেকটি ক্যাটাগরিতেই আবেদন করার কিছু চাহিদা রয়েছে।নীচে এইগুলি সম্বন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

ফেডেরাল স্কিলড ওয়ার্কার (Federal Skilled Worker)

কানাডায় আসার সাথে সাথেই যারা আর্থিক ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যেতে সক্ষম তাদের জন্যই এই ক্যাটাগরি।এই ক্যাটাগরির কিছু চাহিদা আছে।

  • অন্তত এক বছরের ফুল ওয়ার্কটাইম-এর কাজের এক্সপেরিয়েন্স থাকতে হবে।
  • অস্থায়ী ফরেন ওয়ার্কার কিংবা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী হিসাবে অন্তত একবছর কানাডায় বসবাস করতে হবে।
  • একজন কানাডিয়ান এমপ্লয়ারের কাছ থেকে আবেদনপ্রার্থীর একটি স্থায়ী চাকরি থাকতে হবে।

আবেদনপ্রার্থী সমস্ত চাহিদা পূরন করেছে কিনা তা খতিয়ে দেখে পয়েন্ট হিসাব করে ভিসা অফিসার।সেই পয়েন্টের ওপর নির্ভর করে ভিসা অফিসার আবেদন প্রার্থীর ভিসা মঞ্জুর করেন।

শিক্ষাগত যোগ্যতা(সর্বোচ্চ ২৫ পয়েন্ট)

  • হাইস্কুল শেষ করলে পাঁচ পয়েন্ট এবং স্নাতকোত্তর কিংবা পিএইচডি শেষ করতে পারলে ২৫ পয়েন্ট
  • আবেদন প্রার্থীর যদি ট্রেড সার্টিফিকেট থাকে কিংবা দক্ষতামূলক কাজে যদি অংশগ্রহন করে থাকে তাহলে সেই অভিজ্ঞাতাও তাকে ভিসার ক্ষেত্রে সাহায্য করে।

ভাষার ওপর দক্ষতা(সর্বোচ্চ ২৪ পয়েন্ট)

  • কানাডায় ইংরেজী এবং ফ্রেঞ্চ এই দুটি ভাষা অফিশিয়াল ভাষা হিসেবে ব্যবহৃত হয়।তাই জন্য আবেদনকারীকে অন্তত একটি ভাষায় সম্পূর্ণ দক্ষ হতে হবে।
  • প্রত্যেকটি অফিশিয়াল ভাষা শোনার দক্ষতা, বলার দক্ষতা, পড়ার দক্ষতা এবং লেখার দক্ষতার ওপর আলাদা আলাদা ভাবে পয়েন্ট দেওয়া হবে।

অভিজ্ঞতা(সর্বোচ্চ ২১ পয়েন্ট)

  • চার এবং তার বেশি বছর উপযুক্ত লেভেলের অভিজ্ঞতা থাকার জন্য পাওয়া যাবে ফুল পয়েন্ট।

বয়স(সর্বোচ্চ ১০ পয়েন্ট)

  • আবেদনপ্রার্থী ২১ থেকে ৪৯ বছরের মধ্যে হলে পাওয়া যাবে ফুল পয়েন্ট।

অ্যারেঞ্জড এমপ্লয়মেন্ট(সর্বোচ্চ ১০ পয়েন্ট)

  • যদি আবেদনপ্রার্থীর কানাডিয়ান এমপ্লয়ারের কাছ থেকে একটি স্থায়ী চাকরি থাকে কিংবা আবেদনপ্রার্থীর যদি অস্থায়ী কাজের পারমিট থাকে তাহলেও সেই আবেদনপ্রার্থীর আবেদনের গ্রহণযোগ্যতা বেড়ে যায়।

অ্যাডাপ্টেবিলিটি(সর্বোচ্চ ১০ পয়েন্ট)

  • আবেদনপ্রার্থীর কানাডার আদব-কায়দার সাথে মিশে যাওয়ার দক্ষতার ওপরও নির্ভর করে আবেদনপ্রার্থীর আবেদনের গ্রহণযোগ্যতা।

কিউবেক স্কিলড ওয়ার্কার  (Quebec Skilled Worker)

এই ক্যাটাগরিতেও ফেডারেল সিস্টেমের মতো পয়েন্টের মাধ্যমে আবেদনপ্রার্থীর গ্রহনযোগ্যতা নির্বাচন করা হয়।আবেদনকারী যদি অবিবাহত হন এবং নিজের একার জন্য আবেদন করেন তাহলে তার পারমিট পেতে অন্তত ৬০ পয়েন্ট লাগবে।বিবাহিত ব্যক্তির ক্ষেত্রে তিনি যদি তার সঙ্গীকে নিয়ে স্থানান্তরিত হওয়ার জন্য আবেদন করেন তার পারমিটের জন্য নূন্যতম ৬৮ পয়েন্ট লাগবে।

ট্রেনিং(সর্বোচ্চ ২৯ পয়েন্ট)

  • শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং চাকরি সম্পর্কিত ট্রেনিং-এর জন্য আলাদাভাবে পয়েন্ট দেওয়া হয়।
  • একাধিক বিষয়ে বিশেষত্ব থাকলে অতিরিক্ত পয়েন্ট পাওয়া যায়।

বৈধ চাকরির অফার(সর্বোচ্চ ১০ পয়েন্ট)

  • কিউবেক-এর এমপ্লয়ারের কাছ থেকে আবেদনকারী যদি চাকরির অফার পেয়ে থাকেন তাহলে পয়েন্ট যোগ করা হয়।

অভিজ্ঞতা(সর্বোচ্চ ৯ পয়েন্ট)

  • চার এবং তার বেশী বয়সের অভিজ্ঞতা থাকলে সেই আবেদনকারীকে পূর্ণ পয়েন্ট দেওয়া হবে।

বয়স(সর্বোচ্চ ১৮ পয়েন্ট)

  • আবেদনকারীর বয়স ১৮ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে হলে এই ক্ষেত্রে পুরো পয়েন্ট পাওয়া যায়।

ভাষার ওপর দক্ষতা

  • কিউবেক এলাকায় ফেঞ্চ হলো অফিশিয়াল ভাষা।কিউবেক সিলেকশনে লেখার দক্ষতার থেকে বেশী জোর দেওয়া হয় বলার দক্ষতার দিকে।

কিউবেক-এ থাকা এবং বংশ বিস্তার(সর্বোচ্চ ৯ পয়েন্ট)

  • নিজে কিউবেক-এ থেকে পড়াশোনা ও চাকরি-বাকরি করা ছাড়াও শেখানেই যদি নিজের পরিবার গঠন করা যায় তাহলে ভিসার পারমিট পাওয়া সহজ হয়।

বিবাহিত সঙ্গীর বৈশিষ্ট্য (সর্বোচ্চ ১৮ পয়েন্ট)

  • যদি আবেদনকারী তার বিবাহত সঙ্গীর সাথে ভিসার জন্য আবেদন করেন তাহলে তার বিবাহিত সঙ্গীর শিক্ষাগত যোগ্যতা, ট্রেনিং, কাজের অভিজ্ঞতা, ভাষার দক্ষতা এইগুলোর ওপরও পয়েন্ট নির্ভর করে।

সন্তান(সর্বোচ্চ ৮ পয়েন্ট)

  • আবেদনকারীর যদি সন্তান থাকে তাহলে সেই সন্তানের বয়স বারো বছরের নীচে হয় তাহলে তার জন্য ৪ পয়েন্ট এবং সন্তানের বয়স যদি ১৩ থেকে ২১ বছরের মধ্যে যদি হয় তার জন্য ২ পয়েন্ট।

আর্থিক ক্ষমতাসম্পন্ন (১ পয়েন্ট)

  • আবেদনকারী আসার পরও যদি তার খরচ ওঠানোর জন্য যথেষ্ট অর্থিক প্রাচুর্য্য থাকে তাহলে সে এই পয়েন্ট পেতে পারে।

অ্যাডাপ্টেবিলিটি(সর্বোচ্চ ৮ পয়েন্ট)

  • আবেদনপ্রার্থীর সেই জায়গার আদব-কায়দার সাথে মিশে যাওয়ার দক্ষতার ওপরও নির্ভর করে আবেদনপ্রার্থীর আবেদনের গ্রহণযোগ্যতা।

প্রভিনশিয়াল নমিনি প্রোগ্রাম (Provincial Nomination Program)

কানাডার ইমিগ্রিশনের পদ্ধতি তাড়াতাড়ি সম্পন্ন করার একটি প্রক্রিয়া হলো প্রভিনশিয়াল নমিনি প্রোগ্রাম । কানাডার সরকার প্রাদেশিক সরকারের সাথে পার্টনারশিপের মাধ্যমে কাজ হয়।এই প্রোগ্রামে এই দুই সরকার সিদ্ধান্ত নেয় যে কোন আবেদনকারীর আবেদনপত্র গ্রহন করা করে ।

প্রভেনশিয়াল নমিনি প্রোগ্রামে যেসমস্ত প্রদেশ আছে তারা হল-

  • অ্যালবার্টা
  • ব্রিটিশ কলম্বিয়া
  • ম্যানিটোবা
  • নিউ ব্রুনসুইক
  • নিউফাউন্ডল্যান্ড এবং ল্যাব্রাডর
  • নোভাস্কশিয়া
  • ওনটারিও
  • প্রিন্স এডওয়ার্ড আইল্যান্ড
  • সাস্কাচিউয়ান
  • ইউকোন

ফ্যামিলি ক্লাস স্পনসরশিপ (Family Class Sponsorship)

ফ্যামিলি ক্লাস স্পনসরশিপ কানাডার একজন প্রাপ্তবয়স্ক পার্মানেন্ট রেসিডেন্সকে অনুমতি দেয় তার কানাডায় সদ্য স্থানান্তরকারী পরিবারকে আর্থিকভাবে দেখভাল করার।

ফ্যামিলি ক্লাস স্পনসরশিপের চাহিদাগুলি হলো-

  • আইনত বিবাহিত হতে হবে।
  • বাবা-মা কিংবা দাদু-দিদিমা থাকতে হবে।
  • ওপরের উল্লেখিত কোনো পরিবারের সদস্য না থাকলেও অন্যকোনো আত্মীয় হওয়া বাঞ্ছনীয়।

বিজনেস ইমিগ্রেশন (Business Immigration)

যেসব স্থানান্তরকারী কানাডার অর্থনৈতিক উন্নতিতে সাহায্য করতে পারবে তাদের বিনিয়োগ ও ব্যবসায়ীক দক্ষতার মাধ্যমে তাদের জন্য তৈরী হয়েছে বিজনেস ইমিগ্রেশন প্রোগ্রাম।বিজনেশ ইমিগ্রেশন প্রোগ্রামে আছে তিনটি ক্যাটাগরি।আবেদনকারীকে এই তিনটি ক্যাটাগরির যেকোনো একটির মাধ্যমে আবেদন করতে হবে।

  • ইমিগ্রেন্ট ইনভেসটর প্রোগ্রাম
  • এন্ট্রাপ্রনর প্রোগ্রাম
  • সেলফ-এমপ্লয়েড পারসন প্রোগ্রাম

কানাডিয়ান এক্সপেরিয়েন্স ক্লাস (Canadian Experience Class)

এই ক্যাটাগরির মধ্যে কানাডার অস্থায়ী বসবাসকারীরা ও আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা পড়ে যারা কানাডার স্থায়ী নিবাসী হতে চায়।এই দুইধরনের আবেদনকারীর জন্য আলাদা আলাদা নির্নায়ক রয়েছে।

আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে-

  • কানাডার একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে অন্তত দুইবছরের কোর্স পূর্ণ করতে হবে।
  • অন্তত এক বছরের জন্য প্রফেশনার কিংবা টেকনিক্যাল কাজের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হবে।
  • বেসিক ভাষাগত দক্ষতা থাকা প্রয়োজন।

কানাডার অস্থায়ী বসবাসকারীদের ক্ষেত্রে-

  • অন্তত দুইবছরের প্রফেশনাল কিংবা টেকনিক্যাল কাজের অভিজ্ঞতা থাকা প্রয়োজন।
  • বেসিক ভাষাগত যোগ্যতা থাকা প্রয়োজন।

কানাডায় পার্মানেন্ট ভিসা আবেদন করার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য যা একজন আবেদনকারীর অবশ্যই জানা প্রয়োজন তা এখানে সবিস্তারে পাঠককে জানিয়ে দেওয়া হলো।এছাড়াও পাঠকের যদি এই সংক্রান্ত কোনো প্রশ্ন থাকে তাহলে নির্দ্বিধায় জানান কমেন্ট সেকশনে এবং পোস্টটি যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে লাইক ও শেয়ার করে পোস্টটিকে ছড়িয়ে দিন সকলের মাঝে।টেকনোলজি সম্বন্ধিত আরও খবর জানতে চোখ রাখুন টুকিটেকের ওয়েবসাইট এবং সোশ্যাল মিডিয়া পেজে। 

Leave a Reply