অ্যালেক্সা, গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট নাকি সিরি কোন স্মার্ট অ্যাসিস্ট্যান্ট হবে আপনার জন্য উপযুক্ত?জেনে নিন

0
529

বর্তমান যুগে টেকনোলজির কল্যানে ভার্চুয়াল হোম অ্যাসিস্ট্যান্টরাও হয়ে উঠেছে আমাদের গৃহস্থালির অঙ্গ।গৃহস্থালির প্রত্যেকটি কাজই এখন তাদের সাহায্যে চলে।তাই ঘরের আরেকটি সদস্য হিসেবে কোন ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট হবে আপনার যোগ্য সহকারী সেটা সত্যিই একটি ভাবার মতো বিষয়।তাই আজ দেখে নেওয়া যাক অ্যালেক্সা, সিরি নাকি গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট কোনটি হল সবচেয়ে উপযুক্ত ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট।

১।সাধারণ জ্ঞান

বর্তমান যুগে আমাদের মনে যেকোনো প্রশ্নের উদয় হলেই আমরা তার উত্তর খুঁজি ইন্টারনেটে।তাই আমাদের জানার এই কৌতুহল মেটাতে  এই ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট কতটা সক্ষম তা অবশ্যই যাচাই করে নেওয়া উচিত।

  • সাধারণ জ্ঞান সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার ক্ষেত্রে আলেক্সা ও  গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রায় সমান দক্ষতা দেখায়।কিছু কিছু প্রশ্নের ক্ষেত্রে গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট সময় নিলেও অ্যালেক্সা সহজেই তাড়াতাড়ি সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে সক্ষম।
  • তবে সিরি প্রশ্ন উত্তরের দিক দিয়ে একেবারে পরে রয়েছে পেছনের সারিতে।এছাড়াও অ্যাপেক কোম্পানির থেকে জানানো হয়েছে সিরি কাজ সামলানোর ব্যাপারে সাহায্য কিংবা তারিখ, সময় মনে রাখা ইত্যাদি কাজ করতে পারলেও সাধারণ জ্ঞানের প্রশ্নের উত্তর দিতে অক্ষম।

২। মিউজিক এবং পডকাস্ট

প্রত্যেক ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট-এর ক্ষেত্রে তাদের সমস্ত ফিচারের মধ্যে মিউজিক এবং পডকাস্ট সবচেয়ে ভালো হওয়া উচিত।

  • তিনটি ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্টই মিউজিক চালানোর ক্ষেত্রে ভীষন ভাবে দক্ষ।গলার স্বরে মিউজিকের নাম চিনে সঠিক মিউজিক চালানোর দিক থেকে অ্যালেক্সা, গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট এবং সিরি তিনজনেই সমানভাবে তাদের দক্ষতা প্রমান করেছে।
  • তবে পডকাস্ট চালানোর ক্ষেত্রে দেখা যায় অল্প সমস্যা।অ্যালেক্সা অতি কষ্টে তাও পডকাস্ট চিনে খুঁজে বের করতে পারলেও গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট ও সিরি এখনও এই ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে। 

৩। বিনোদন

বিনোদনের দিক দিয়ে এই ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট ভীষনভাবে সাহয্য করে ব্যবহারকারীকে।

  • অ্যালেক্সা এই ক্ষেত্রে সমস্ত ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট-এর থেকে আগে এগিয়ে রয়েছে।এখন আলেক্সার সাহায্যে সহজেই অ্যামাজন ফায়ার টিভিকে নিয়ন্ত্রন করা যায়।ফায়ার টিভি স্টিকের সাহায্যে শুধু মাত্র ভয়েস কম্যান্ডের মাধ্যমেই দেখা যায় নিজের পছন্দমতো শো।
  • গুগল ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট ক্রোমকাস্ট যুক্ত টিভি কিংবা অন্যান্য বিনোদনমূলক ডিভাইসে সহজেই নিয়ন্ত্রন করতে সক্ষম হয়।
  • তবে সিরি শুধুমাত্র অ্যাপেল টিভি বা অ্যাপেল-এর বিনোদনমুলক ডিভাইসেই একমাত্র কাজ করে।

৪।খাবার অর্ডার, হোটেল বুকিং

এই তিনটি ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্টই খাবার অর্ডার দেওয়া কিংবা রেস্তোরাঁয় সিট বুক করা কিংবা ভালো রেস্তোরাঁর রেকমেন্ডশন দেওয়ার ক্ষেত্রে ভালো মতই দক্ষ।

তবে এই তিনটি অ্যাসিস্ট্যান্ট ভারতীয় খাবার অর্ডার করার ক্ষেত্রে ঠিক মতো কাজ করলেও, চাইনিজ খাবার অর্ডার দেওয়ার ক্ষেত্রে এই ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট বিশেষ কিছু সাহায্য করে না।

৫। অনলাইন শপিং

অনলাইন শপিং-এর ক্ষেত্রে অ্যালেক্সা এবং গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট এই দুটিই ব্যবহারকারীকে দক্ষতার সাথে সাহায্য করে।তবে সিরি এই ক্ষেত্রে পড়ে রয়েছে সবার পেছনে।অনলাইন শপিং-এর ক্ষেত্রে সিরি বিশেষ একটা সারা দেয় না।

৬। যোগাযোগ

সারাদিন ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট-এর রোবটের সাথে  কথা বললেই তো আর চলে না নিজের চারপাশের আসল মানুষদের সাথেও যোগাযোগ রাখার প্রয়োজন।সেই কাজের ক্ষেত্রেও এই তিনটে ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট সাহায্য করে ব্যবহারকারীকে।

  • অ্যালেক্সার সাহায্যে অন্য অ্যালেক্সা ব্যবহারকারীকে অডিও মেসেজ পাঠানো কিংবা টেক্সট মেসেজ পাঠানো এছাড়াও ফোন করা সম্ভব হয়।তবে এই কাজগুলো সম্পন্ন করার জন্য ব্যবহারকারীর ফোনেও অ্যালেক্সা ইনস্টল থাকতে হবে।
  • গুগল অ্যাসিস্ট্যান্টও কল করতে এবং মেসেজ পাঠাতে সাহায্য করে, তবে গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট নিজস্ব নাম্বার ব্যবহার করে থাকে।তবে গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট আন্তর্জাতিক কল করতেও সক্ষম।এই ক্ষেত্রে অ্যালেক্সা পড়ে রয়েছে পিছনে।
  • সিরিও ব্যবহারকারীকে মেসেজ ও কল করতে সাহায্য করে।তবে সিরি ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট-এর এই সুবিধা একমাত্র অ্যাপেল কোম্পানির ডিভাইসেই পাওয়া যায়।

৭। দিক নির্ণয়

বাইরে বেড়াতে গেলে পথ বলে দেওয়ার কাজে ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্টের জুড়ি মেলা ভার।

  • কোন পথে যেতে হবে সেটি নির্দেশ করার ক্ষেত্রে সিরি নিজের কাজে ভীষণভাবে দক্ষ।তবে ট্রাফিকের ব্যাপারে প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা যায় সিরির।
  • গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট এই কাজের ক্ষেত্রে একেবারে সুযোগ্য একটি ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট।পথ নির্দেশ থেকে ট্রাফিকের প্রশ্নের উত্তর, এমনকি একটি পথে ট্রাফিক বেশী হলে তাড়াতাড়ি গন্তব্যস্থলে পৌঁছানোর জন্য কোন রাস্তা ধরা প্রয়োজন এই সব ক্ষেত্রেই এই ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট দক্ষতার সাথে কাজ করে।
  • তবে এই ক্ষেত্রে সবচেয়ে পিছিয়ে পড়েছে অ্যালেক্সা।দিক নির্ণয়ের কাজে অ্যালেক্সার ওপর বিশেষ একটা ভরসা করা চলে না।

৮।স্মার্ট হোম

স্মার্ট হোমের ক্ষেত্রে ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট একটি ভীষনভাবে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ।সেইদিক দিয়ে এই তিনটি ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট ব্যবহারকারীকে একেবারেই নিরাশ করে না। যদিও স্মার্ট হোমের কিছু কিছু অ্যাকসেসরিসের সাথে অ্যাপেল কোম্পানির সিরি সাপোর্ট করে না তবে বাকি দুটি ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট এবং আলেক্সা সহজেই সাপোর্ট করে এবং দক্ষতার সাথে কাজ করে।

৯। সহজলভ্যতা

যদি চাহিদা অনুযায়ী ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট কাজ না করে তবে ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্টের উপস্থিতি মূল্যহীন।

  • অ্যামাজনের অ্যালেক্সা যাতে বিভিন্ন থার্ড পার্টি ডিভাইসে কাজ করে সেইদিকে খেয়াল রেখেছে।বিভিন্ন
  • গুগল অ্যাসিস্ট্যান্টও সহজেই কাজ করে অন্যান্য থার্ড পার্টি ডিভাইসে।এছাড়া গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রায় সমস্ত স্মার্ট ফোনেই বর্তমান।
  • সিরি অবশ্য কোনো থার্ড পার্টি ডিভাইসে সাপোর্ট করে না।অ্যাপেল তাদের ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট সিরিকে শুধুমাত্র সীমাবদ্ধ রেখেছে তাদের কোম্পানির ফোন ও ইলেকট্রনিক ডিভাইসের মধ্যে।  

১০। স্বর চেনার ক্ষমতা

ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসাবে যাকেই বাছা হোক না কেন, তার ওপরে কতটা নির্ভর করা যায় তা যাচাই করে নেওয়া জরুরি।তবে সেই ক্ষেত্রে এই তিনটিই তাদের দক্ষতা মোটামোটি প্রামাণ করতে পেরেছে।

  • গুগল ভয়েস ম্যাচ সবকটি ভয়েস অ্যাসিট্যান্টের থেকে এই বিষয়ে নিজের দক্ষতা প্রমাণ করে দেখিয়েছে।এই ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট সহজেই গলার স্বর চিনে নিয়ে প্রশ্নের সমাধান করতে সক্ষম।
  • তবে সিরি-র ক্ষেত্রে একটু খাটিনির প্রয়োজন পরে ।সিরি-কে সঠিকভাবে ব্যবহার করার আগে তাকে আগে ব্যবহারকারীর গলার সাথে পরিচয় করিয়ে নিতে হয়।একবার ব্যবহারকারীর গলার স্বর রেজিস্টার হয়ে গেলে সিরি বেশ ভালো মতই তার দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম।
  • অ্যালেক্সাও গুগল অ্যাসিস্ট্যান্টের মতই দক্ষ।এছাড়াও এতে আছে আকর্ষনীয় ‘ফলো-আপ’ ফিচার, যার মাধ্যমে আগের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার পরেও কিছুক্ষনের জন্য জেগে থাকে ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট।ফলে পর পর প্রশ্ন থাকলে ব্যবহারকারীকে বার বার অ্যালেক্সাকে জাগানোর প্রয়োজন পড়ে না।

শেষমেশ বলা যায় গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট ও অ্যালেক্সা পরীক্ষার দিক দিয়ে প্রায় একই নম্বরে উত্তীর্ণ হয়েছে, তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট কিন্তু অ্যালেক্সাকে ফেলে দিয়েছে বেশ পিছনে।সেইরকমই সিরি কিন্তু পিছিয়ে পড়েছে বেশ অনেকটাই।তবে এটা মাথায় রাখতে হবে এই সবকটি ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্টই সময় পেরোনোর সাথে সাথে হবে আরও উন্নত এবং কাজের ক্ষেত্রেও হয়ে উঠবে আরও দক্ষ।এই তিনটি ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট আমাদের বিচারে একটু উনিশ-বিশ হলেও কাজের ক্ষেত্রে এদের কাছে বিশেষ ঠকবেন না।এরপর বাকি সিদ্ধান্ত আপনার।

আপনার কি মনে হয়?আপনার মতামত অবশ্যই আমাদের জানান কমেন্ট সেকশনের মাধ্যমে এবং লাইক ও শেয়ার করে পোস্টটিকে ছড়িয়ে দিন সকলের মাঝে।টেকনোলজি সম্বন্ধিত আরও খবর জানতে চোখ রাখুন টুকিটেকের ওয়েবসাইট এবং সোশ্যাল মিডিয়া পেজে। 

Leave a Reply